শুধু তোমারই জন্য

হাতের মোবাইল টা বেজে যাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। রাত দুটো। অনিকেত ঘুমিয়ে কাদা।ঘুম জড়ানো চোখ কচলাতে কচলাতে ফোনটা ধরলো।

- "হ্যালো? "

-- " অনি, ঘুমাচ্ছিলে বোধয়, সরি, তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল।" ওপাশ থেকে দিয়ার করুন গলার সুর।

অনিকেত আর দিয়ার বিয়ের কথা চলছে। সেভাবে এখনো মেলামেশা করা হয়নি। নরমাল কথাবার্তায় সীমাবদ্ধ। অনির পছন্দ ছিলো দিয়া। কিন্তু দিয়া কেমন জানি জড়োসড়ো। আসলে কম বয়সে মাতৃহারা হওয়ায় গুমোট ভাব এসে গেছে তার মধ্যে। তারসঙ্গে অনেকবার প্রেমে ধোঁকা খাওয়া। সবমিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে।

দিয়ারও অনিকে পছন্দ । তবুও মুখ ফুটে বলতে পারেনি। তবুও আজ নিঝুম রাতে হঠাৎ তারই কথা মনে পড়েছে ।

আজ দিয়ার খুব মন খারাপ। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী।অনিকেত ও দূরে। কেনো জানি হটাৎ খুব মনে পড়ছে অনিকের কথা। আজ কেনো জানি খুব তাকে পেতে ইচ্ছা করছে।

- " কে দিয়া , হ্যাঁ,বলো, কিছু হয়েছে ? " অনিকের গলায় উদ্বেগ।

--" অনি , তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। একটু কাছে আসবে ?"

- "এখন, এত রাতে? আমি তো বহুদূরে।"

--" জানিনা অনি। আসলে আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। এইদিনে মার কথা খুব মনে পড়ে। জানো অনি, আমার মা খুব ভালো ছিলেন। ভালো সংস্কার দিয়েছেন। খুব ভালোবাসতেন আমাকে। শেষ অব্দি যাওয়ার সময় আমার হাতের জল খেয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সবসময় বলেছেন ছোট বোনটার হাত ধরে রাখতে। আজ অব্দি সে কথার অন্যথা করিনি। কিন্তু জানো , মাঝে মাঝে ইচ্ছা তো করে, কেউ তো এসে একটু ভালোবাসুক, হাতটা ধরুক । একটু হামি দিক। চোখে চোখ রেখে, কাছে এসে , বলুক ভালোবাসি, বলুক পাশে আছি। একটু হাতে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজুক । আমার একটু আবদার সহ্য করুক। আমি অনি সর্বস্ব দিয়ে ভালবাসতে চাই । তাই প্রথম প্রথম ছুটে গেছি বারবার। প্রত্যাখ্যান ও হয়েছি। প্রতারিত হয়েছি। তাই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় । ভয় পাই।"-- এক নিশ্বাসে বলে গেলো দিয়া।

ওপাশে অনি কিছু বলছে না। খালি মনের অজান্তেই তার দুচোখে জল ভরে এলো। কাঁদেনি অনি কোনোদিন। কিন্তু কি হলো আজ কে জানে।অনির মনে হচ্ছিল এই মেয়েটাকে যেনো আমি সারাজীবনের জন্য পাই। পাশে থাকি। ভালবাসতে পারি। হৃদয় উজাড় করে। কোনোকিছুর আশা না করে । পাগল হাওয়ায়, দমকা বাতাস, উচ্ছল সমুদ্রর মত ভালবাসতে পারি । কাঁদছে অনি। দিয়ার প্রত্যেক কষ্টকে নিজের কষ্ট বলে মনে হচ্ছে তার । জ্বলতে চাইছে অনি সেই কষ্টের আগুনে ।

- " হেল্লো, অনি শুনলে, ইসস ঘুমটা নষ্ট করলাম না তোমার । আই অ্যাম ভেরী ভেরী সরি। তুমি সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত। আর আমি কি ছাইপাশ শোনাচ্ছি। সরি, ঘুমোও।, রাখচি।" বলে ফোন রেখে দিল।

এপাশ থেকে অনির মুখ থেকে কথাই বেরোচ্ছে না।

।।পরেরদিন।।

দিয়া চেম্বার যাওয়ার আগে ছাদ থেকে কাপড় নামাচ্ছে । আকাশ কালো করে বৃষ্টি আসবে বলে। দিয়ার গতকালের কথাগুলো মনে পড়ছে। হটাৎ এত ইমোশনাল হয়ে অনিকে এত কথা বলা ঠিক হয়নি ।ছেলেটা তো কিছু বললো না। কোনো কল ও নেই সারাদিনে । কি ভাবলো কে জানে ।

বৃষ্টি পড়ছে আস্তে আস্তে। দিয়ার খুব ইচ্ছে করছে ভিজতে। কাপড় গুলো সাইড এ রেখে দাড়ালো বৃষ্টির নিচে। চোখ বন্ধ করে। দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে ।

হটাৎ মনে হলো হাতটা আস্তে করে কেউ ধরলো। চোখ খুলে কাকে দেখলো দিয়া। এ যে অনিকেত।

-" একই, তুমি, কখন?, ইসস বৃষ্টিতে দাড়িয়ে আছো" কথা শেষ করতে পারলো না দিয়া।

--" শ শ শ কোনো কথা হবে না, হাতটা দাও , কাছে এসো" - বলে কাপল ড্যান্স র মত দিয়ার হাতটা ধরে কোমর জড়িয়ে ধরলো। 

দুজন দুজনের চোখে হারিয়ে গেলো যেনো।

অনিকেত- " দিয়া, তুমি তো আমার সব কাহিনী জানো। সব জেনে এসেছো। আমিও এমন কাউকেই ভালবাসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বিশাল ধাক্কা খেয়েছি। সে কারণে আমিও ভালবাসা ভুলে গেছি। কিন্তু তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি, জানিনা কেনো লাগলো যে তোমাকে ভরসা করা যায়, ভালোবাসা যায়। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারিনি । রক্ষা তুমি গতরাতে সব বললে। সেই জন্য ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই পালিয়ে এলাম। আর পারছিলাম না "

" আমি আবার ভালবাসতে চাই দিয়া। আমি আবার ভালো থাকতে চাই। তোমার পাশে, তোমায় নিয়ে ভালো থাকতে চাই। আজ, এমনকি এখন থেকে তুমি জেনে যেয়ো , তুমি আর একা কষ্ট ভোগ করবেনা , আমি আছি। আমি থাকবো। শুধু তোমারই জন্য। ভালো আছি, ভালো থাকবো, শুধু তোমারই জন্য।

হাত ধরেছি, চিরদিন ধরে থাকবো, শুধুই তোমার, তোমারই জন্য । আজ থেকে তুমি একা নও আর।"

দিয়া " কিচ্ছু বলতে চাইনা আর। জাস্ট একটু জড়িয়ে ধরবে আমায়। জাপটে, খুব কাছে । "

দিয়ার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছে না। দূরত্ব কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে। হাল্কা হাল্কা হাওয়ার পরশে কেঁপে উঠছে দু জোড়া ঠোঁট। মিলনের প্রতিক্ষায়।

নতুন ভালোবাসার সূর্য্য উদয় হবে আজ।

বলছে এরা মনে মনে। ওদের প্রত্যেক নিশ্বাস, প্রত্যেক রোমকূপ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে 

" শুধু তোমারই জন্য"