গল্প হলেও সত্যি
গল্প হলেও সত্যি
গল্প হলেও সত্যি / তহিদুল ইসলাম
রাত তখন গভীর। প্রায় সকলেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু "দাক্ষিণাত্য এক্সপ্রেস" তো এখানে থামার কথা নয়! সামনে জ্বলজ্বল ক'রে সবুজ বাতি জ্বলছে। তা'হলে?
কী মনে ক'রে, অমৃতা সেকেন্ডক্লাস স্লিপার থেকে নামলো। চতুর্দশীর চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, সামনে একটা গ্রাম্য মন্দির। হঠাৎ ট্রেনটা চলতে শুরু করলো।
অমৃতা দৌড়াতে লাগলো—- তখন ট্রেনের গতি অনেকটাই বেড়ে গেছে, এসেও লাভ হল না তার। এখন উপায় ??? ভেবে হতাশ ……
স্টেশন জনশূন্য, কোথাও কারো সাড়া শব্দ নেই, প্রাণী বলতে সে একা। ট্রেন ছেড়ে যাবার পর চারি পাশ শান্ত, স্তব্ধ হয়ে আসে। নেমে আসে নিঝুম নিস্তব্ধতা— পিনড্রপ সাইলেন্স।
সে ভয়ার্ত একটা পরিবেশ, বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করতে থাকে অমৃতার। স্টেশন হতে বেরিয়ে আসে, গ্ৰামের পথ ধরে হাঁটতে থাকে। শুক্লা চতুর্দশীর রাতে জোৎস্নাস্নাত পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখতে দেখতে সে এগিয়ে যায় মন্দিরের দিকে; রেলস্টেশন থেকে কয়েক শো মিটার দূরে।
বহু প্রাচীন একটা মন্দির। মন্দিরের ছাদ কবেই ভেঙ্গে পড়েছে, খসে খসে পড়ছে দেওয়ালের পলেস্তারা। সেই ভগ্নপ্রায় মন্দির প্রাঙ্গনে অমৃতা এসে দাঁড়ালে, বারান্দায় বসে ধ্যানমগ্ন একসাধু তাকে সাহস দিলেন,
– তুই নির্ভয়ে থাক মা। কোন চিন্তা করিসনে।
বিগত পাঁচ বছর বাবার মুখ থেকে মা ডাক শোনেনি সে। অজ্ঞাত পুরুষ কণ্ঠে পিতৃস্নেহ পূর্ণ মা সম্বোধনে বিগলিত অমৃতা বারান্দার নীচে এসে দাঁড়ায়। সামনের বারান্দা ফাঁকা। কেউ নেই। তবে….!!! বিস্মিত অমৃতা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আশেপাশে কোথাও নেই। এক অজানা আশঙ্কায় বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠল তার।
সেই বিস্ময়াবিষ্ট রাত্রি শেষে অমৃতা খবর পেল, রেল দুর্ঘটনার। পরের স্টেশনে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এবার পিতৃহারা মেয়ের বাবার কথা মনে পড়ল। সে মনে মনে প্রার্থনা করে, "বাবা তুমি যেখানেই থাকো, ভালো থেকো।"
—-–: সমাপ্ত :------