Tohidul Islam

Horror Others

4  

Tohidul Islam

Horror Others

পিশাচ

পিশাচ

8 mins
488



তহিদুল ইসলামরচনাকাল –১০.০৩.২০২২তাং---১৩.০৩.২০২২

বনমালী স্কুল থেকে বেরিয়ে হাত ঘড়িটা দেখে নিলেন, সাড়ে চারটে বাজে । অনেক লেট হয়ে গেল, ব্যস্ততার সাথে সাইকেল টা গ্যারেজ থেকে বের করে প্যাডেলে পা রাখলেন,বাড়ি ফিরতে অন্ধকার হয়ে যাবে, দাঁতে দাঁত পিষে সাইকেলিং করছেন।

স্কুলে যাতায়াতের পথে নিশ্চিন্দপুর মোড়ের উপর রহিম চাচার চা'য়ের দোকানে পাড়ার বয়েস্ক লোকেদের বৈকালিক আড্ডার একটা আখড়া বলা যেতে পারে। স্কুল ফিরতি বনমালী দুদণ্ডের জন্য হলেও মাঝেমধ্যে অনাড়ম্বর পার্টিতে এটেন্ড করেন।সেদিনও দাঁড়ালেন। রহিম চাচার দোকানে এককাপ সুগার ফ্রি গরম চা আর পাঁচটা বুড়োর ছেলেবেলার গল্প শুনতে শুনতে নষ্টালজিক হয়ে পড়া, ব্যাস।

দোকানের পার্শে সাইকেল খানা স্টান্ড করালেন, বাঁশের মাঁচায় বনমালী পাছাটা ঠেকাতে যাবে ঐ সময় পাড়ার দিক থেকে একটা অস্পষ্ট চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে এলো। দোকানের সব্বাই তখন ভয়ার্ত রামছাগলের মত কান খাড়া করে আছেন, অনেকের গলা,গলা ছিঁড়া বিকট আওয়াজে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে একটা অসহায় মানুষের আর্তি, মারণ চিৎকার।নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে, কথাগুলো বলতে বলতে রহিম চাচা দোকান থেকে বেরিয়ে পাড়ার দিকে এগিয়ে গেলেন।

বনমালী দোমনায় পড়ে ধীরে চলো নীতিতে রহিম চাচার পশ্চাদ অণুসরণ করলেন।

পাড়ার ভিতরে ঢুকতেই আওয়াজ টা স্পষ্ট হয়ে আসছে, ভীষণ রকম জোরালো শোনাচ্ছে।মাড় মাড়, মেড়িই ফেল ডাইনিকে,ক্যান ঢুকেছে এ পাড়ায়, ঝাঁটা পেটা কর্ অকে ! 

পাড়ার বাঁক ঘুরতেই দেখা গেল, একটা মেয়ের উপর পাড়ার লোক চড়াও হয়েছে। মেয়েটা প্রাণ ভয়ে পালাচ্ছে,পেছন থেকে মেয়েগুলো তাকে তাড়া করছে।একজনের প্রাণ সংশয়,অন্যদের বর্বরতা।এযেন,জঙ্গলের ভিতরে একটা নিরীহ হরিণের সঙ্গে একদল হিংস্র জানোয়ারের অসম লড়াই। 

মেয়েটাকে তারা কেউ ঘোষাচ্ছে, কেউ কিলোচ্ছ, কেউ বাঁশ দিচ্ছে, কেউ চিবোচ্ছে, কেউ বা চুলকে নাটাই ঘূর্ণি ঘোরাচ্ছে।আবার এই নৃশংস দূশ্যটাকে লকলক জিহ্বা'য় তৃপ্তি ভরে অনেকেই লেহন করছেন। 

মেয়েগুলোর অমন পৈশাচিক কান্ড দেখে রহিম চাচা দৌড়ে যান।মহিশ কালো দীর্ঘদেহী বাবরী ওয়ালা পুরুষটা কে ছুটে আসতে দেখে অনেকেই রণে ভঙ্গ দিলেও জনা তিনেক মেয়ে তখনো প্রহার করছে তাকে। পাকশাট মেরে সরিয়ে দিতেই তারা কটরা ব্যাঙের মতোই ক্রোধে ফুঁসতে থাকে। আগুনে ঘি ঢালার মতোই ফুঁসে উঠে ধেয়ে আসলে রহিম চাচা হুঙ্কার ছাড়লেন," মেয়েটাকে মেরে জখম করেও তোদের রাগ মেটেনি ? কী দোষ করেছে ও ? একটা নিরীহ অসহায় মানুষকে...

মেয়ে তিনটির মধ্যে মধ্যবয়েসি একটা দস্যি মেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে কী, "ওও পাড়ায় এইচে ক্যান? অকে কতবার নিষেধ করিচি,তোর নজর খারাপ ,তুই পাড়ায় আইবিনা! "

মেয়েটার কথায় বাক বন্ধ,নির্বাক। ক্রুদ্ধ রহিম চাচা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন তার দিকে। মেয়েটির নজরে কী দোষ করেছে যে, পাড়ায় আসতে পারবে না সে ? এত বড় নিধেজ্ঞা? যার জন্য পাশবিক অত্যাচার ?

-দোষ করেচে তো! নিশ্চয়ই করেচে! ওও পাড়ায় এসে ছোটো ছোটো বাচ্চাদের দিকে পিটিপিটি তাকাবে।বাচ্চারা ভয় পেয়ে খেলা ফেলে দৌড়ে পালায় কেঁদে পড়ি কি মরি।রাতির বেলায় হাড় কাঁপি জ্বর আসে বাচ্চেটার।দিন দিন শুকি খড়ি হতি থাকে।ডাক্তার, কবিরেজ দিখে বাচ্চাটা আর ভালো হয় না।রোগ ধরতি পারে না তার।

বনমালী এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন, মেয়েটার কথায় ভীষণ হাসি পাচ্ছিল তার।তবে তিনি হাসতে পারছিলেন না, তার সারা শরীর শিরশির করছিল, চোখ লাল হয়ে আসছিল। গলার হাড়টা ওটা নামা করছিল,ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি।

দস্যি মেয়েটির দিকে উৎসুক্য বনমালী চেয়ে রয়েছেন, স্বাভাবিক দৃষ্টি,অথচ গম্ভীর, বিস্ময়ভরা। মেয়েটিকে পরখ করে নিচ্ছেন, মেয়ের আদলে পুরুষালী আচরণ, হিংস্র লোলুপ দৃষ্টি ,মানুষের রক্তে আসক্ত। নিরীহ অবলা অসহায়ের রক্তে নিজেকে রাঙানো টাই তার নেশা।

তার পার্টনার দুটো তখন সরে পড়েছে।

কৌতুহলাক্রান্ত বনমালী একজন স্কুল শিক্ষক হয়েও অবিবেচকের মতই ঐ মেয়েটির দস্যিপনা, মধ্যযুগীয় বর্বরতা, মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা মেলে না। এসবের মধ্যেই তিনি ঢুবে রয়েছেন। হুঁশ ফিরল আহত মেয়েটির গোঙানিতে।

জখম মেয়ে টির দিকে তাকাতেই মাস্টার মশাইয়ের বুকের ভিতর ধপ করে উঠে,বিভৎস! সারা শরীরে রক্ত আর রক্ত,ক্ষত থেকে চুঁইয়ে পড়ছে।পরনের শাড়ি ভিজে লাল।জমাট বাঁধবে সে শক্তিটুকুও নেই তার। বাচ্চাদের তাড়া করলে যেমন আশ্রয় খুঁজে নেয়, কারুর কোলে লুকোতে চায়। সে রকমই জড়োসড়ো, আতঙ্কিত মেয়েটি রহিম চাচার পেছনে দাঁড়িয়ে জোড় হাতে, যেন কিছু বলতে চায়ছে, " আমাকে মারবেন না বাবু, আমাকে …… ।"

মেয়েটার রক্ত মাখা চেহারার নীচেও আরেকটা চেহারা রয়েছে, ভয়ংকর সে চেহারা। শ্মশানের একটা আধপোড়া কাঠকে কে যেন কুঁদে কুঁদে কাঁকলাশ আকৃতি উপহার দিয়েছে তাকে। গোলাকৃতি মুখোমণ্ডলের কপালে দুটো গর্ত , কালো পাথর বসানো রয়েছে । যমের অরুচ । হাত-পা নলা অশক্ত। কতদিন অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছে,কত অত্যাচার হয়েছে তার উপর তা সে নিজেও জানে না, খোঁজ রেখেছেন উপরওয়ালা।

এযেন সাদা থানে আবৃত সশরীরে উপস্থিত একটা জ্যন্ত ভূত ।    ------------------------------------

এর কিছুদিন পরে রহিম চাচার কাছে অসহায় মেয়েটির পরিচয় ও তার লাইফ হিস্ট্রি শুনে বনমালীর দুই চোখের কোনে চিকচিক করে ওঠে, গলাটা ভারী হয়ে আসে,একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেন --- মানুষ কতবড় পিশাচ হতে পারে।

মেয়েটির নাম রঞ্জনা,রঞ্জনা ঘোষ।খনা গলায় কথা বলার জন্য তাকে খঞ্জনা নামে ডাকা হত । এ নামেই পরিচিত সে। যদিও এটা তার শ্রুতিকটু, বিকৃত নকল কণ্ঠ,পরে প্রাপ্ত। খঞ্জনা নামটি কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা পাঠকমহলের বিচার্য বিষয়।

রঞ্জনা ছোটো থেকেই চঞ্চলা,দুষ্টুমিষ্টি স্বভাবের। অস্থির খঞ্জনা চটুল চাহনি তার, সবাইকে মোহিত করে তুলতো।

একবার এক আত্মীয়ের বৈবাহিক অনুষ্ঠানে কাকতালীয় ভাবে সাক্ষাতে হারা হারিয়ে যায় তন্বী নয়নার চাহনীর গহীনে। কাজল কালো গঙ্গাজলে ডুবে মরে। আবার শ্রাবণের ভরা গাঙে উতলা হাওয়ায় ঢেউ ভাঙে ঢেউ ওঠে। উজান নদে ক্লান্ত ভাটিয়ালী পড়ন্ত বিকেলে ভালো লাগা। ভালো লাগা থেকে ভালবাসা, ঘনিষ্ঠতা,পরে পরিণয়।

বসন্তের এক রাতে তারা দুজনে মিলে সিঁদুর মাখে, নিজেদের রাঙিয়ে তোলে আনন্দে মেতে ওঠে, ঘুমন্ত পৃথিবীকে জাগিয়ে তুললে রঞ্জনার বাপের বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

তখন পরিত্যক্ত নবদম্পতির নিকট সিঁদুর খেলা হয়ে উঠলো পুতুল খেলার সমান ,সংসার একটা স্বপ্নমাত্র।ঘোর ছুটলো সংসার নামক সমুদ্রে পড়ে। যার কুল নাই, কিনারা নাই,আছে না পাওয়ার মত যন্ত্রনা আর হতাশা।

শূণ্য পকেটে ভালবাসা উষ্ণতা হারায়, মধুচন্দ্রিমার জৌলুস নিভে আসে,অস্বস্তি বাড়তে থাকে,সময় ক্রমশঃ অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে।

বিরক্তির রাত কাটে, পুবাকাশ রক্তিমাভায় ভরে সূর্য উঠলে একটা নতুন দিনের শুরুতে হারাকে বেরিয়ে পড়তে হল অর্থোপার্জনের তাগিদ নিয়ে।

একান্নবর্তী পরিবারের মেয়ে রঞ্জনা একলা ঘরে সূর্যের উত্তাপ নেয়,ওম মাখে নববধূর গাল রাঙিয়ে তোলে,একটা আধপচা খড়ি হাতে তুলে নখ দিয়ে কুঁচি কুঁচি করে প্রহর গুনে,ঘর থেকে দেউড়ি করে।

জনহীন প্রান্তরে টাইম পাস, তখনি নীরবে কাছে আসে পাশে দাঁড়ায়, নিষ্ঠুর নিঃশব্দে তার কষ্টগুলো তৃপ্তি ভরে দেখে।

রঞ্জনার কষ্ট হারা বুঝতে পারে। একটা বেবী ডল্ কিনে আনে স্ত্রীর কোলে দিয়ে বলল, " পুতুল টার যত্ন নাও, আদর কোরো।" যাক হাতে পায়ে কুঁড়ে বৌটা একটা কাজ পেল বটে, বেবীর স্নেহভরে যত্ন নেওয়া, ভালোবেসে আদর করার মধ্য দিয়ে দিন কাটে বেশ।

মিছামিছি মাতৃস্নেহ অপচয় বেশিদিন নয়,একদিন তাদের কোল আলো করে বাবাই এলো। অভাবী সংসারে শতকষ্ট, দুঃখের ভিতরেও আনন্দে বুক ভরে উঠলো, সুখের আলোয় ঝলমল করল বাড়ি।

দাদু, ঠাকুর্দা'র আদর স্নেহ না পেলেও বিদেশ বিভুঁইয়ে বাবাই কে নিয়ে সুখের সংসার তাদের। বাবাইও খুশি । সকাল হলেই বাবাইয়ের বন্ধুরা এসে হাজির হয়। নিঃশব্দে হাক পাড়ে তারা। বাবাই ঘর থেকে বেরিয়ে ধূলোয় ধূসর পোশাকে, সোঁদা গন্ধে মেঠো পথে পায়। রাতের ঠোঁটে চুম্বন করে রাঙানো মুখে সখা ইয়া বড় লাল টিপ পড়ে ঘুম জড়ানো চোখে পুবাকাশে উঁকি দেয়। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ কোলাকুলি করে। খালবিলে শাপলা শালুক পদ্ম পাতায় হাজার মানিক জ্বলে । লাজুক মেয়ে চন্দ্রা সাদা মেঘের ওড়নায় মুখ ঢাকে, নদীর জলে খেলা করে। দিনের শেষে ক্লান্ত বাবাই মায়ের কাছে ছুটে আসে, মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুম পাড়ানি গান শুনে ঘুমিয়ে পড়ে কখন।

সবই ঠিকঠাক চলছিল,একদিন হঠাৎ করে সুখ থমকে দাঁড়ায় ; মাথার উপর সিঁদুরে মেঘ দেখে। হারা জন খেটে বাড়ি আসে, ঘাড়ের কোদাল নিড়িনি নামিয়ে রাখে উঠোনের এক কোনে, রঞ্জনাকে ডাক দেয়, তাকে এক ঘটি জল দিতে বলে ,গলাটা ভিজাবে । শালা এমন এক হাড়কিপ্টের কাজ ধরেছি,জলখাবার তো দেয়ই না, কাঠফাটা চোত-বোশেখে জলটুকুও দেয় না! মজুররা গরীব, তাই বলে তারা মানুষ নয়? একটা যন্ত্র ? গলাটা শুকি কাঠ হইয়ে গেছে,পেটে ক্ষিদেয় মোছড় দিচ্ছে। রাগে শরীরটা রি রি করে উঠল,সে ক্লান্ত দেহখানা সাবধানে ভাঙে ঘরের দাওয়ায় উঠে বসে।

রঞ্জনা ঘরের মেঝেয় আঁচল পেতে শুইয়ে ছিল। হারার ডাকে উঠে আসে। আজ সারাদিন শুয়ে আছে সে,তলপেটে যন্ত্রনা ,নাওয়া খাওয়া নাই।

রঞ্জনা টালমাটাল পায়ে দাওয়ায় আসে, ধূলোয় লুটানো শাড়ির আঁচল লতানো গায়ে জড়িয়ে নেয়, ঘুমটা টানে । মাথার চুল এলোমেলো -অবিন্যস্ত, পরিধেয় শাড়ির পরিপাটি নাই, একদিনের পীড়ায় রোগা হয়ে গেছে, অচেনা লাগছে তাকে , চেহারার কী নিদারুণ পরিবর্তন!

ঘরের দাওয়ায় রঞ্জনার উপস্থিতি টের পেলে আনমনে হারা পূনরায় জল চেয়ে বসল, " দে, দে, রঞ্জু ,এক ঘটি জল দে ,তেষ্টায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে, আর সহ্য করতে পারছি না।"

তৃষ্ণার্ত মানুষ টাকে এক গেলাস জল দেবে, সেটুকুও ঘরে নেই। মজুরি খেটে হারা বাড়ি ফেরার আগে জল,খাবার রেডি করে রাখে, কিন্তু আজ সে অপারগ। কি বলবে ? কি বলে বোঝাবে ? সে ভেবে নিজেই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সে।

তাড়াতাড়ি কোরে, মাইল তিনেক দূরে নিশ্চিন্দ পুর মোড়ে জল আনতে বেরোয় রঞ্জনা। তাকে ঘড়া কাঁখে যেতে দেখে হারার মেজাজ ওঠে সপ্তমে। সে ছুটে আসে, চোখ পাকিয়ে বাজখাঁই গলায় তাকে জিজ্ঞেস করে , " কিরে জল নাই বাড়িতে?" রঞ্জনাকে নিশ্চুপ দেখে গলাটা চড়িয়ে হারা ফের জিজ্ঞেস করে ,"গলাটা ভেজানোর মতও নাই?" উত্তর না পেয়ে ক্রুদ্ধ হারা চুলের মুঠি ধরে টেনে আনে রঞ্জনাকে, চলে চড় থাপ্পড় — সে যেন বড় অপরাধী তার কাছে। 

রঞ্জনা বিনা প্রতিবাদে ওর অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে । তবে তার মধ্যে একটা ভিন্নধর্মী রিঅ্যাকশন দেখা যায়, অমানবিক নির্যাতনে উঃ শব্দটিও করে না,কাঁদে না,চোখ দিয়ে শ্রাবণ ধারা ঝরে পড়ে না, কখনো মুখ বিকৃত করে না। প্রহারে আরক্ত মুখে চোখে গভীর দৃষ্টি, দৃষ্টির ভিতর শত সহস্র প্রশ্ন---- 

বাড়িটাতে কিছুক্ষণের জন্য থমথমে পড়ে গেল।

তারপর—

তারপর থেকে, পান থেকে চুন খসে পড়লে ওকে রোষের মুখে পড়তে হয়,চলে অত্যাচার, অবিচার । রঞ্জনাও বুঝতে পারে হারা পাল্টেগেছে, আজকাল সে আর মানুষ নাই। সংসারটা পড়ে পড়ে ধুঁকছে, সেদিকে তার খেয়াল নাই, রোজগার যা করে মদ গিলে বাড়ি আসে।এক মাতালেই বাড়িকে মাথায় করে অস্থির করে তোলে।

হারাও বুঝতে পারছে, সংসার টাকে নিজ হাতে গলা টিপে মারছে সে। নেশার ঘোর কাটলে,তার বুকের ভিতরেও রক্ত ক্ষরণ হয়,গলাটা ভারী হয়ে আসে। 

আবার পেটে মদ পড়লে পাল্টে যায়,সে ভাবে, " বৌটাকে এত পেটায়,তবু কাঁদে না কেন? কোন্ ধাতুর গড়া যে, এত শক্ত সে ? না কেঁদে, চোখ দুটো বের করে শুধু প্যাকপ্যাক করে তাকায় ?" 

– অবশ্য ঐ সময়ে তার রক্তবর্ণ চোখ, একজন পুরুষের বুকেও ভীতির সৃষ্টি করে। তবে কেন ? ব্যপারটা তলিয়ে দেখতে হবে।

এক বুড়িমা'র নিকট রঞ্জনার ব্যপারটা জানালে তিনি বলেন, " শোন্, মেয়েদের কাছে স্বামী দেবতা সমান।তার কখনো অমঙ্গল করতে পারে না ! আর মেয়েদের কে সংসারের সব রকম ঝড় পোহাতে হয়, সহ্য করতে হয়।তারা যে সর্বংসহা। তাই বলে ওদের প্রতি অবিচার করে পায়ে ঠেলিস নে। বৌ হল ঘরের লক্ষী,ওদের প্রতি ভক্তি রাখ,সুখ পাবি।"

বৃদ্ধার কথাগুলো মনঃপুত হলো না,জটাধারী এক বাবার কাছে গিয়ে জানতে চায়লো সে। বাবা দুচোখ বন্ধ করে ধ্যানে বসলেন।ক্ষণকালে যোগাড় করে চোখ খুললেন। ভয়ঙ্কর অথচ গম্ভীর স্বরে বলে ওঠেন ,"ওরে নরাধম,তোর সামনে দাঁড়িয়ে ঘোর বিপদ,সাবধান হয়ে যা তুই। ও মেয়ে, মেয়ে নয়,স্বয়ং পিশাচিনী। ওদের রক্তচক্ষুই অমঙ্গলের লক্ষণ, ওরা নিঃশব্দে নিশীথে মানুষের প্রাণশক্তি শুষে নেয়।"

 বাবার কথায় ভয় পেয়ে দু-হাত জড়িয়ে ধরে, ধরা গলায় কাঁদো কাঁদো হয়ে হারা জিজ্ঞেস করে, "বাবা, তাহলে উপায়! "কিছুক্ষণ দম ধরে বাবা বললেন,– উপায় একটা আছে।– আমাকে বাঁচান, আমাকে…..– বাড়ি থেকে বৌকে তাড়াতে গেলে, সে একটা ঝামেলার ব্যপার। বরং তুই'ই পালা, বৌ কে না বলে।সে যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকবে, চুপিচুপি ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যা।– না বাবা, পারবো না, রঞ্জনা ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আর ওকে….– তাহলে মরগে,বাবার আশ্রম থেকে বেরিয়ে বিমর্ষ বিষাদপূর্ণ হারা চিন্তা করে," কিন্তু, আমাকে তো বাঁচতে হবে। বাবা যেটা বলেন সেটা ঘটে।"পৃথিবী যখন সুখনিদ্রায় নিদ্রিত। তখন কে জানতো,রঞ্জনার পাঁজর মড়মড় করে ভেঙে পড়বে, ঘুম ভেঙে ডুকরে কেঁদে উঠবে,একলা হয়ে পড়বে। আর, দিনরাত্রি খুঁজে মরবে।

সেই রাত্রি থেকে রঞ্জনা আজও খুঁজে বেড়ায়।

—-----------------০—-----------------------


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror