Tohidul Islam

Abstract Horror

4  

Tohidul Islam

Abstract Horror

রক্তপিশাচ

রক্তপিশাচ

9 mins
354



                        রক্তপিশাচ / তহিদুল ইসলাম


  সেদিন অফিস থেকে সোজা বাড়ি ফিরে আসে বিমল । সে রাস্তা থেকেই শুনতে পায়, মা গলা ফাড়ছে । মানে মধুবালা চেঁচিয়ে বাড়ি শুদ্ধ মাথায় তুলেছে । মধুবালা'র ঝাঁঝালো কথায় বিমল এক প্রকার হতচকিত ,সে কখনো মা'য়ের অমন বাচন ভঙ্গি দেখেছে বলে তার মনে হয় না । বিমলের উপর নজর পড়তে মধুবালার কণ্ঠ পার্বত্য প্রবাহ থেকে নিঃশব্দে আছড়ে পড়ে সমতলে বয়ে চলে," হতচ্ছাড়া হতভাগী , যেদিন বাড়িতে পা দেছে , একের পর এক….. " স্বামীর কথা মনে পড়তে মধুবালা কঁকিয়ে উঠে কাঁদতে থাকে সে।


যার জন্য এতোটা হইচই, শ্রাবণে অনাকাঙ্ক্ষিত বজ্রপাত ,ঝড়ঝঞ্ঝা বয়ে চলে সেই কৃষ্ণকলি ঘরে দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে নীরব এক মূর্তি চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছে, বুকের চাপা কষ্টগুলো পুড়তে পুড়তে সে একবার দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছে।


মধুবালা'র অমন আক্রোশের কারণ ,বিমল বাড়ির অমতে বিয়ে করে বাবা মা'য়ের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় সে । তাদের একমাত্র সন্তান বিমল ,তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্ছ শিক্ষিত করবে, একটা মোটা বেতনের জব করবে সে । সমাজে তাদের প্রতিপত্তি বাড়বে,সর্বোপরি তাদের গর্বে বুক ভরে উঠবে। একদিন তারা ধুমধাম করে খোকার বিয়ে দিয়ে আনবে। কিন্তু হায়! কোন্ চক্রান্তে পড়ে তাদেরকে অমন চরম মূল্য চুকোতে হলো!


  বিয়ের আনন্দে আকস্মিক মেঘে আকাশ ছেয়ে নিলে ,অগোছালো সংসারে চিলচিৎকার পড়ে যায় , ছোটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি'র একশেষ,ঝড়ের দাপটে বিয়ে বাড়ির প্যান্ডেল লন্ডভন্ড, শতছিন্ন উলঙ্গ ঘরটিকে আত্মসম্মানের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়--- অবশেষে বৃষ্টি নামলে মান-অভিমান সমস্ত ভুলে সব্বাই ভিজে একাকার।


 মধুবালা বিয়ের রাতের শেষ প্রহরের দিকে আচমকা কেঁদে উঠলে ঘুমন্ত পৃথিবী জেগে উঠে । বিমল ধড়পড় করে বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে,পেছন পেছন বাড়ির আর সকলে বাথরুমে ঢুকতেই সবার চোখ কপালে উঠে , বিমলের বাবা শিশির কুমার গোস্বামী ওরফে শিবু'র নিথর দেহ পড়ে রয়েছে,দেহ রক্ত শূন্য,চোখ দুটো উন্মুক্ত,বেশ বড় বড়, কিছু একটা বলতে চায়ছে,পারছে না সে' --- বাড়িতে একটা মড়া কান্না পড়ে গেল । একে দুয়ে পাড়ার লোকজন বাড়িতে এসে ভিড় জমায় । তারা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে,কানে কানে ফিসফিস করে বলে, তবু বলতে সাহস হয় না কারুর --- গোস্বামী পরিবারে কি ঘটছে,আর কী ঘটতে চলেছে, সবটাই যেন রহস্যের মোড়া।


  মধুবালা, তার চোখের জলে স্বামীকে চির বিদায় জানিয়ে বৈধব্যের বেশ পরিধান করেন। যা প্রতিটা মুহূর্ত কুরে কুরে খেতে থাকে তাকে । স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারে না সে । ত্রিশ বছর যার সাথে সংসার করলো তাকে একটিবার বলতে দেখিনি , " আজ আমার শরীরটা খারাপ করছে গো,মাথা ধরেছে, ভালো লাগছে না । " অমন তরতাজা জোয়ান মানুষটির অকাল প্রয়াণে নতুন বৌকে ঘিরে তার যেন কেমন একটা সন্দেহ হয় । দিন দিন তা বাড়তে থাকে। বৌ'মার সব কিছুতেই একটা অলক্ষণে ছায়া দেখতে পায় সে । তার হাঁটাচলা ,খাওয়া দাওয়া, পোশাক আশাকে, এমনকি সে হাসলেও তার মাঝে একটা অমঙ্গল দেখতে পান।


 এখানেই শেষ নয়,পাড়া প্রতিবেশীর মুখেও উঠতে বসতে একটাই কথা এখন , " অলক্ষ্যুণে ।" সময় যত গড়ায় নতুন বউ নিজেকে ঘরে বন্দি করতে থাকে, লজ্জা আর ঘৃণায় বাড়ির বাইরে পর্যন্ত বেরোতে পারে না সে । আজ সে সবার কাছে চক্ষুশূল । তবুও একটাই সান্ত্বনার বিষয় হলো, শিক্ষিত শুভাশিস গোস্বামী ওরফে বিমল গোস্বামী ওসবে বিশ্বাস করে না,আর বিশ্বাস করেনি বলেই তার প্রেমের অমর্যদা হতে দেয়নি । তার পবিত্র প্রেমকে সম্মান জানিয়ে আজও বৌকে ভালবাসে সে ।


          


  বিমল সটান ঘরে ঢুকে যায়, কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রাখে । ড্রেস চেঞ্জ করে । চেয়ারে এসে বসে । কৃষ্ণকলি ,প্রতিদিনের মত ঠান্ডা জলের বোতলটা নিয়ে আসে, বিমল এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে সে।


আজ বিমলকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে, তার মুখটাও ভারী । আজ মনটা ভালো নাই ।অফিসে কলিগের সাথে সামান্য একটা ব্যপার নিয়ে কথা কাটাকাটি । তারপর …...


--এই মুহূর্তে মাকে কিছু বলা ঠিক হবে না, কিছু বলতে গেলে হয়তো সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবে । বরং থাক,পরে বুঝিয়ে বলা যাবে।" এই ভেবে অলস শরীরটাকে এলিয়ে দেয় সে ।


--- মা শুনো। বিমল তার মাকে ডাক দেয়..

  

    মধুবালা এসে বিমলের পাশে বসলে একগাল হেসে মাকে বলে," মা, বলছি কি!

-- কি বল্ 


-- বলবো? বিমল মিটিমিটি হাসে, মায়ের দিকে তাকায় ' কি বলে… 


-- হ্যাঁ, বল্ ! কি বলতে চাস ? 


বিমল ঠোঁট কামড়ায়, পরে স্মিত হেসে বলে , " ভয় করছে! "


বলতে চেয়ে না বলায় বেশ বিরক্ত মধুবালা । আপনার ভেতরে তেজোদীপ্ত নারীসত্তা টা ঝেঁঝিয়ে উঠে ," আমি সাপ ,না বাঘ ? আমাকে ভয় পাস কেন তোরা ? 


বিমল এবার মুখটা কাঁচুমাচু করে বলে , "ন- না-আ ,মানে ! "


মধূবালা গলা চড়িয়ে বলে, " না মানে ! কি বলতে চাস,তা খুলে বল্ !

 

বিমল এবার একগাল হেসে মায়ের হাতটি চেপে ধরে তার কোলের উপর নেয়। ভালো ছেলেটির মত করে বলে , " মা, ধরো-ও : কৃষ্ণকলি তোমার মেয়ে, মেয়ের মতো, যদি সেই মেয়ে কোনো দোষ করে বসে, তখন তুমি তাকে বাড়ির ঝি'য়ের মত করেই বকা দিবে ? মারবে ? না পারতে তা ? আর দেখো আমার বিয়ের রাতে বাবা মারা গেল,তাতে কি দোষ তার ? ও তখন বাড়ির নতুন বৌ, বাড়ির সব ঠিক মতো চিনতোই না!


   বিমলের কথায় মধুবালা আবারও ঝেঁঝিয়ে উঠে, মুখে খই ফুটতে থাকে তার ," আমার সব কথায় তোর কানে বাজে, না , আর বাজবেই না কেন ! বউ পেয়েছো, নতুন মা পেয়েছো, আর ঝাঁটা খাকির কথা ভালো লাগবে ! পচে গেছে সে ! সবার অসুবিধা এখন ! 


  মধুবালার কথা গুলো যেন কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে বিমলের গায়ে । অসহ্য হয়ে উঠে তার । আর কথা খরচ না করে উঠে আসে ,সটান ঘরে ঢুকে যায় সে।


  মধুবালা রাগে পড়ে বিমলকে যে কথা গুলো শোনালো ,তা ঠিক করেছে সে ? এরকম সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে এক সময় সে কেঁদে ফেলে । দরদর করে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে ,তবুও সান্ত্বনা আসে না তার। তাকে কয়েকটি প্রশ্ন সব সময়ের জন্য তাড়া করতে থাকে , " এখন তোর বাবা মরতো? অমন তাগড়া জোয়ান স্বামী আমার, তোর বউ'ই তোর বাবা কে খেয়েছে,আর তুই বউ নিয়ে পাগল। অর চোখ দেখলেই আমার ভয় করে ! আর আমি এইটুকু খুকি নই ! সব বুঝি রে……..।"


   এরপর থেকে একটা বাড়ির ভিতরে তারা যেন আলাদা আলাদা পরিবারের সদস্য হয়ে পড়ে। এক সাথে থেকেও কোনো কথা নাই , কেউ কারুর ছায়া পর্যন্ত মাড়ায় না। দিন যত যায় দূরত্ব বাড়তে থাকে তাদের মাঝে ।


   এভাবেই চলতে থাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস….


  বিমল একদিন মর্নিং ওয়াক থেকে বাড়িতে ফিরলে তাকে দেখে অস্বাভাবিক মনে হয় । রাতের স্বপ্নটা খারাপ ছিল এসেই মায়ের খোঁজ করতে কৃষ্ণকলিকে জিজ্ঞেস করল সে," মা'কে দেখছি না ? এখনও ঘুম থেকে উঠেনি নাকি ? কৃষ্ণকলি বাড়ির বাইরে খচর্ খচর্ করে ঝাড়ু দিচ্ছিলো । তার কাছে কোন সাড়া না পেয়ে বিমল বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল ।


   বাড়ির ভেতরটা কেমন যেন ঠান্ডা মনে হল । নিঝুম নিস্তব্ধ । দরজার এপাশ থেকে , ' মা, মা-আ ,মা-আ-আ ' বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকে সে । ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে বিমলের বুকে ধড়াস করে উঠে কাঁপতে থাকে । এক অজানা আশঙ্কায় শরীরে কাঁটা দিয়ে গেল তার। 


   মধুবালার গলার কাছে দুটো ক্ষতচিহ্ন , রক্ত শূন্য দেহ তার , পুরো শরীরটাই ফ্যাকাসে হলদে হয়ে গেছিলো ---- দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না কারুর । মা যা নিয়ে সন্দেহ করতো, নিজের জীবন দিয়ে তার প্রমাণ করলো । একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে মায়ের কথায় আমল দিইনি। কিন্তু মা'কে দিয়েই আজ তার মূল্য চুকোতে হলো ।" গলার ভেতরে দলা পাকিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল তার ।


   বিমল মাতৃশোকে মুহ্যমান ,শোকস্তদ্ধ । তাকে আর কিছুই ভালো লাগছে না ; কথা নাই, ক্ষুধা তৃষ্ণা নাই, শরীরে কোনো এনার্জি নাই, অফিস যাওয়া বন্ধ, বাড়ি আর বাড়ি ,একপ্রকার আবদ্ধ জীবন তার। সময়টাও তার প্রতি যেন বিরূপ হয়ে গেছে । টাইম পাস তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


    একসাথে থাকা ,খাওয়া , বিছানায় রাত কাটালেও তাদের স্বামীস্ত্রীর মধ্যে দূরত্বটা দাঁড়িয়েছে কয়েক যোজন । সে দিন দিন একা হয়ে পড়ছে। অসহায় ফিল করছে সে । আর একাকীত্ব জীবনটা যেন গিলে খাচ্ছে তাকে।

 

 একদিন সকালে শ্বশুর বাড়ির লোক আসল, কৃষ্ণকলিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শ্বশুর বাড়ি বলতে, বিমলের আপন শ্বশুর-শাশুড়ি কেউ নেই। কৃষ্ণকলি ছোটো বেলায় বাবা মাকে হারিয়ে মামার বাড়িতেই মানুষ সে । মামার কোনো সন্তানাদি না থাকায় মামাবাড়ির আদর পেয়েছিল সে । তার জন্যই কি সে অতটা…….


   কৃষ্ণকলি গুম গুম পদক্ষেপে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে মামার সাথে টুকটুকে উঠে বসল । একবারের জন্যও বাড়ির দিকে ফিরেও তাকালো না সে । যার সাথে সাত বছরের অম্লমধুর সম্পর্ক, সাত-আট মাসের সংসার অথচ একবারের জন্যও বললো না তাকে ," আমি আসছি গো "। এতো সব ভাবতে গিয়ে বিমলের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে ।


   বিমল বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে, কিছুতেই তার ঘুম আসছে না। চোখের পাতা দুটো এক করতে পারে না সে। আবার চোখের উপর কিছু চাপা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ভীষণই অস্বস্তি লাগে তার । সে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে, দেওয়ালে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত্রি এক টা, এখনও অনেক রাত বাকি ! রাতের আঁধার আরো ঘনিয়ে আসছে যেন , বাড়িয়ে চলেছে তার দীর্ঘতাও । অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ এক হয়ে নিরবিচ্ছিন্ন নিকষ কালো অন্ধকার তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছে । আর যত্তো সব দূর্ভাবনা গুলো মাথায় ভিড় জমিয়েছে , ভীষণই বিরক্তিকর "যার সাথে এতদিনের সংসার থাকা খাওয়া সত্বেও ঘূণাক্ষরে টের পেলুম না, তার ভিতরে কার বাস? সে মানুষ? না অন্য কিছু? যদি সে মানুষ হয়ে থাকে তাহলে তো নিরাপরাধ একটা মেয়েকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে চলেছে তার অবিবেচকের মতো কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত। 


একজন অবসরপ্রাপ্ত করনিক বয়েস্ক মানুষ, তার সাথে ছোটোবেলার খেলার বন্ধু মিসতুতো বোন পরে পরিণয় সুত্রে বাঁধা পড়ে যার জীবনটাই ক্লান্ত অভাব অনটনের মধ্যে খুড়িয়ে চলা সংসারের ঘানি টেনে । তার উপর গত দেড়-দু বছর যাবৎ ক্যানসারের একটানা চাবুকের আঘাতে অসহ্য যন্ত্রনায় কাতর যে, যার এমনিতেই সংসার চালানো কঠিন,তার উপর পরিত্যক্তা মেয়ে ! কথায় আছে, ' অভাগা যেদিকে তাকাই সাগর শুকায়ে যায়।' তাদের এই দুর্দিনে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবে নাতো ? পাশে দাঁড়াবে ? তাদের কষ্টের গুলো কথা শুনবে ? তাদের সান্ত্বনা দেবে ? না তাদের দেখে নিজেদের মধ্যে কানাকানি করবে ? পাশে থেকে টোন কাটবে? যা কাঁটার মতো বিঁধতে থাকবে তাকে। এটাই কী বাস্তবতা ?


আবারও ভাবছি , একটা আপদ তাড়াতে আরেকটা উটকো ঝামেলা ,যা ভীষণই অস্বস্তির ,পাড়া প্রতিবেশীর কাছে , ক্লাবের ছেলেদের কাছে, অফিসে কলিগের কাছে একটা শিক্ষিত ছেলে শেষ পর্যন্ত ভ্যাম্পায়ারে বিশ্বাস করাটা তাদের হাসির খোরাক জোগাবে । আর তাদের বিশ্রী হাসি গুলো জ্বালাময়ী কাঁটার মতোন বুকের ভিতর বিঁধতে থাকবে । তবুও তো আমাকে বাঁচতে হবে । নচেৎ বাবা মায়ের মতো…..! ধুত্তোর! কিযে ভাবছি ! মাথাটা বুঝি গেছে ! বিমল বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে । 


বিমল বারান্দায় পায়চারী করতে থাকে । কি ভেবে বাইরে বেরিয়ে এলো সে , রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবে , কৌশিককে ডেকে বিষয়টা বলা যাক। আবার মনে হল, এত রাতে তাকে ডাকা ঠিক হবে না, সকাল হোক । মেন গেট লক করে বিমল বাড়ির ভেতরে আসে ,ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে ,বিছানায় উঠে বসল সে।


গোস্বামী পরিবারে বিমল এখন একা । বাবা মাকে হারিয়ে নিজেকে অসহায় ফিল করছে সে । আর কৃষ্ণকলি,থাক…..। ওকে ভালবেসে ছিল বলেই তো আজ তার এই দুর্দশা । এমন সময় বিমলের কানে আসে ,কে যেন দরজায় ঠোকা দিল। 


--আমার মনের কথাগুলো কৃষ্ণকলি শুনতে পেয়ে কী প্রতিবাদ করার জন্য এসছে? 


বিমল দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসে, কেউ নেই ,মনের ভুল ভাবে সে । সে দরজা বন্ধ করে বিছানার উপর উঠে বসতেই আবার দরজায় ঠোকার শব্দ । বিমল বিরক্ত , আবারও দরজা খুলে বারান্দায় আসে সে ,কেউ নেই।ধাত্তোর !


---যার দরকার থাকবে , তাকে ডাক দিবে! এভাবে বারবার…..


বিমল এবার ঘরের আলো অফ না করে দরজাটা বন্ধ করে ঘরের ভেতর আসে, বিছানায় উঠে বসল সে। ঘরের আলো নিভে অন্ধকার নেমে এল , বিদঘুটে অন্ধকার । সুইচ অফ করার শব্দ কানে এলো তার। এবারে ক্রদ্ধ বিমল চিৎকার করে উঠল, 


--কে'এ ? কে'এ-এ বারবার ডিস্টার্ব করছিস ? ঘরের ভেতরে নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান করল, কথাগুলোর প্রতিধ্বনি তার কানে এল । বুকে ধড়াস করে উঠল, বিমলের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল । সে গুটিগুটি পায়ে দরজার কাছে আসে। মাথা গোলানো মত দরজা খুলে মাথাটা বের করে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বারান্দাটা দেখে নিল সে, কেউ নেই ,বারান্দার সামনে তুলসি তলায় ঘন অন্ধকার । বারান্দায় এসে দেখে বোর্ডের মেন সুইচ অফ। অন করতেই আবারও ধড়াস করে ওঠে বুকে ,কাঁপতে থাকে সে । বারান্দায় চাপ চাপ রক্ত ,রক্ত পায়ের ছাপ। তৎক্ষণাৎ বিমল ঘরে ঢুকে পড়ে দরজা লাগিয়ে দেয় । দরজায় হেলান দিয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে সে। ঠাকুরকে ডাকতে থাকে সে , গলাটা শুকিয়ে আসে তার ।


বুকে ঝাপানো থামলে সে বিছানায় এসে বসে। বারান্দায় রক্তের দাগ কিভাবে এল সে বুঝে উঠতে পারছে না। নিশ্চয় কেউ রক্তাক্ত পায়ে গিয়েছে ,যাওয়াটাও বেশি ক্ষণ হবে না । সে কি চলে গেছে ,না বাড়ির কোথাও লুকিয়ে আছে ? ভীষণই ভয় করছে তার ! এই কঠিন পরিস্থিতিতে একজনের প্রয়োজন বোধ করতে কৃষ্ণকলি'র মুখখানা ভেসে উঠলো । আপনার এই করুন অবস্থা দেখে সে নিজেকে ধিক্কার জানালো । 


বিমল সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে গ্যাস লাইটারের দিকে হাত বাড়ালো,লাইটার নেই । অবাক লাগছে তাকে,


--এই খানেই তো রাখলাম লাইটার ! গেল কই! টেবিলের উপরে বইপত্রের স্তূপে , বিছানায় , বালিশের তলায় সব জায়গায় আতিপাত্তি করে খুঁজেও না পেয়ে আশ্চর্য লাগলো তাকে ! বারবার অমন রহস্যময় ভৌতিক ঘটনায় বিচলিত সে। এসব কিসের লক্ষণ ! মাথায় আসছে না তার । আবার পিছু ছাড়ছে না তার ভয় ! কামারের ধাপার মত হার্টবিট ,বুকটা উঠছে আর পড়ছে ।


--এই নাও । গ্যাস লাইটার জ্বেলে কে এগিয়ে দিল তার হাতখানি । লাইটের সামান্য আলোয় চোখে আসছে রক্তবর্ণ দুটো লাল চোখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে । তার ঠোঁটের কোণ দিয়ে তাজা রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। সে স্বদন্ত দুটো বের করে ক্রুর হাসি হাসছে ,এগিয়ে আসছে তার দিকে।


--কৃ-কৃষ্ণকলি ! তুউমি এখানে ! আড়ষ্ট ঠোঁটে কথাগুলো উচ্চারিত হতে চিরচেনা কণ্ঠ তার কানে এল ," হ্যাঁ , আমি কৃষ্ণকলি ! 


বিমল জীবন বাঁচাতে পালাতে গেলে কৃষ্ণকলি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । পড়ে রইলো বিমলের নিথর দেহ খানা।


পরের দিন সকালে খবরে প্রকাশ, " বিমলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ।"

                সমাপ্ত

________________________________



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract