Sunanda Chakraborty

Inspirational

4  

Sunanda Chakraborty

Inspirational

গুরুদক্ষিণা

গুরুদক্ষিণা

3 mins
253


সবাই তো তোমায় বেতন দেয় মাস্টার মশাই , আমি তো দিতে পারিনা তাও কেন তুমি আমাকে পড়াও ।

ছোটটুর মনে এই প্রশ্নটা সেই কবেই থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে , আসলে সে সকালে উঠে চা বিক্রি করে , গরু গুলোকে মাঠে ছেড়ে এসে তবেই পড়তে যায় , ওর তো বাবা নেই , মা ও অন্যের ঘরে কামিন খাটে, সম্পত্তি বলতে এই মাটির দুইটা রুম আর একটা ছোট্ট উঠোন ।


মাস্টার মশাই তাই একটু যেন বেশি ভালোবাসেন ছোটটুকে, ছোটটু অঙ্কে বেশ ভালো, মুখে মুখেই সেরে নেয় অনেক কাজ ।

মাষ্টারমশাই এর ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করে ছোটটুও একদিন মাস্টার হোক , সর্বোপরি হোক একজন উচ্চ মানবিকতা সম্পন্ন মানুষ , ঠিক যেমন ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়।


দীর্ঘ তিরিশটা বছর কাটলো , ছোটটু এখন কলকাতায় পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ব্যস্ত স্কুলে, এক নামকরা স্কুল , যেখানে সমস্ত রাজ্যের প্রতিবন্ধীরা পড়তে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে । ছোটটু তার মাইনের টাকার ৭৫ শতাংশ তুলে রাখে তার ছাত্রছাত্রীদের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে, বাকি ১০ শতাংশ টাকা ছোটটু পাঠায় গ্রামে তার মায়ের জন্য , যদিও সে পণ করেছে মাকে কিছুদিনের মধ্যেই নিয়ে আসবে কিন্তু মা যে বড়ই নাছোড়বান্দা , গ্রামের মুক্ত পরিবেশ , গরু , সেই আধ ভাঙ্গা ঘর আর এক চিলতে উঠোন ছেড়ে শহরের জেলখানায় বন্দী হতে নারাজ ।


ঠিক দুই সপ্তাহ পর মায়ের কাছে গেল ছোটটু, তার চায়ের কেটলি আজ বয়ে বেড়ায় গ্রামেরই অন্য এক ছেলে পলাশ , সে মনে করে এই কেটলির হাত হলেই ছোটটুর আজ কলম ধরা , তাই সেও হয়তো একদিন তার মতই বড়ো হবে , এক কথায় বলতে গেলে ছোটটু পুরো গ্রামের গর্ব সাথে সাথে সেই মাস্টার মশাই এর যার চোখে একদিন জ্বলজ্বল করে উঠেছিল ছোটটুর মাস্টার হওয়া ।

মাস্টার মশাই অন্যের ছেলেদের শিক্ষা দিলেও নিজের ছেলেপুলেদের মানুষ করতে পারেননি , দুবছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার শোক তাঁকে প্রায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অন্যদিকে বড়ো ছেলে বড়লোক শশুর বাড়ি পাওয়ায় ঘরজামাই হয়ে গেলো শেষমেশ , ছোটো ছেলের একটা কাপড় ব্যাবসা তাতে খুব একটা চলেনা তাই বউয়ের কথায় বাপের দায়িত্ব অস্বীকার করলো সেও ,

চোখের জ্যোতি আর বয়সের চাপে মানুষ যে কিভাবে নেতিয়ে পড়তে পারে তা ছোটটু আজ বেশ বুঝলো , হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগোনোর চেষ্টারত মাসাতের মশাইকে এক নিমেষে শহরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো ছোটটু, মাকেও ইতিমধ্যে নিয়ে এসেছে কলকাতা শহরে । 


ছোটবেলা থেকে বাবাহীন ছোটটু, বাবার আদর , স্নেহ কেমন হয় জানেই না সে , তবে পিতৃতুল্য একজনকে পেয়েছিল সে যিনি কিনা তার কাছে ভগবানসম, তার পথপ্রদর্শক ।

সেই চা বিক্রেতা ছোটটু আজ মাস্টার হয়েছে , স্বপ্ন পূরণ করেছে মাস্টার মশাই এর, সর্বোপরি হয়েছে একটা মানুষের মতো মানুষ ।

আজ মাস্টার মশাই দুপুর বেলা খাবার থালায় কাঁদতে কাঁদতেই বললেন 

"একদিন প্রশ্ন করেছিলি না তোর কাছে পয়সা পায়না তাও পড়াই কেন তোকে , দেখ সবার মত পয়সা না দিয়েও জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ গুরুদক্ষিণা টা তুই আজ আমায় দিয়েই দিলি , আমার ছেলে না হয়েও ছেলেদের চেয়ে বেশি যত্ন করলি , জীবনের শেষ পর্যায়ে লাঠি হয়ে দাঁড়া আমার " ।


   কলমে : সুনন্দা চক্রবর্তী


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational