Suparna Chakraborty

Tragedy Inspirational Others

4.5  

Suparna Chakraborty

Tragedy Inspirational Others

//একটি গরিব ছেলে //দুর্ভাগ্য জ

//একটি গরিব ছেলে //দুর্ভাগ্য জ

3 mins
595


  1. রতন দাস এর বাড়ি বেথুয়া ডরি। বাবা বাবু দাস মা মিনা দেবী। রতন দাস এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। পড়াশোনা খুব ভালো। প্রত্যেক বছর ক্লাসে ফার্স্ট হয়। এজন্য বাবা বাবু দাস আর মা মিনা দেবীর খুব গর্ব। স্কুলের মাস্টাররা খুব ভালোবাসে রতন দাসকে। রতন দাস এর বাবা র একটু জায়গা জমি আছে। বাবুদাস সেটা নিজের হাতেই চাষ করে বছরের ফসল ওদের খাবার জোগাড় হয়ে যায়। শাক সবজি ,চাল ,ডাল, তেল ,সারা বছরের খাদ্যের জোগাড় বাবু দাস জমি থেকে করে। হঠাৎ বাবু দাসের মৃত্যুতে রতন দাসের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। রতন দাস কিংকর্তব্যবিমূঢ়! কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা। এতদিন বাবা মাথার উপর বট গাছের মত ছিল। যাই হোক রতন দাস ভোর তিনটে উঠেসারাদিন কাজকর্ম করে স্কুলে যায়। শুধু তাই নয় মা মিনা দেবী সারাদিন মেশিন চালায় সেলাই করে। ছেলে রতন দাস বলে মা তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না, তোমার শরীর খারাপ হয়ে যাবে। বাবা তো আমাকে ছেড়ে চলেই গেল। তুমিও কি চলে যাবে? মা মিনা দেবী বলতে থাকে তুই একা একা কত করবি। তোর এখন সামনে পরীক্ষা।। তুই ভালো করে পরীক্ষাটা দে। তোকে অনেক বড় হতে হবে। তুই অনেক বড় চাকরি করবি। তোর প্রতি তোর বাবার অনেক আশা ছিল। যাইহোক, রতন দাস জমির কাজ সারাদিন করে, স্কুল করে, রাত জেগে জেগে পড়তে থাকে। মিনা দেবী মাঝে মাঝেই বিছানা থেকে উঠে দেখে যায়। ছেলে কি করছে। মিনা দেবি বলে তুই শুয়ে পড় ,অনেক রাত হয়ে গেল। এত রাত জাগলে তোর অনেক শরীর খারাপ হয়ে যাবে। তুই অসুস্থ হয়ে যাবি। এত অল্প বয়সে অধিক পরিশ্রম সহ্য হবে না। তখন রতন দাস বলে মা, আমাকে দাঁড়াতেই হবে। প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে। ভালো রেজাল্ট করতে হবে ,না হলে আমি বড় চাকরি করতে পারবো না। তুমি কোন চিন্তা করোনা। অনেক রাত হল তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। রতনের স্কুলের হেডমাস্টার শ্যামাসেন অংকে গোল্ড মেডেলিস্ট রতন ওই স্যারের কাছে অংক করতে যায়। ওই স্যারের অনেক কাজ করে দেয়। জল এনে দেয় পা টিপে দেয়, শুধু তাই নয়, ওর মাও মাঝে মাঝে ওই বাড়িতে কাজ করে। চাল-ঝাড়া ,গম ঝাড়া ,পাট ছাড়ানো, এইসব কাজ করতেই থাকে দুটো পয়সার জন্য। রতনের বাবা মা মারা যাওয়ার পর এই// দুর্ভাগ্যজনক পরিবেশে// ওকে পড়তে হয়। তবু ও রতন হার মানেনি। রতন ওর বাবার মত লড়াকু ছেলে। রতনের বাবা রতন কি সবসময় বলতো' বিপদকে' কখনো ভয় পাবি না, সব সময় জয় করবি। রতন ও এই কথাই মেনে চলত। রতন অংক করতে গিয়ে অঙ্ক স্যারের পা টিপে দিচ্ছিল। তারপর ঘুমে ঢুলছিল, তারপর অংকের স্যার ওকে ৫০ টা বেতের বাড়ি মারলো। তারপর বলল আরো জোরে জোরে পা টিপে দে। রতন যখন বাড়ি গেল তখন ওর সারা শরীর লাল চাকা চাকা হয়ে ফুলে গেছিল। ওর মা রসুন তেল গরম করে লাগিয়ে দিয়েছিল। ওর মা খুব কেঁদেছিল। আর বলল তোর বাবা থাকলে তোকে এত কষ্ট করতে হতো না। সবই ভবিতব্য। এত কষ্ট চোখে দেখা যায় না। কি করবে? বাবা হঠাৎ করে মারা গেল। এই// দুর্ভাগ্যজনক পরিবেশে //ওকে আসতে হলো। তারপর রতন খুব ভালোভাবে পরীক্ষা দিল। রেজাল্ট খুব ভালো হলো আস্তে আস্তে ওর মার শরীর খুব ভেঙ্গে পড়ছে। সারাদিন সেলাই করে। লোকের বাড়ি কাজ করে। রতন খুব চিন্তায় পড়ে গেল। রতনের এইবার কলকাতায় যেতে হবে ভালো পড়াশোনার জন্য। রতন ও চিন্তা করতে লাগল ওর মাকে একা একা কি করে ফেলে যাবে। কাল পাকচক্রে সেই সময় বাংলাদেশ থেকে ওর বাল্যবিধবা মাসি এসে উপস্থিত। রতন মনে শান্তি পেল। রতনের মাসি কে বলল তোমার তো সাতকুলে কেউ নেই তোমাকে আর যেতে হবে না , চিন্তা করো না আমি তোমাদের দেখবো।তুমি আমার মার কাছেই থাকো। তুই কলকাতা থেকে ফিরে আয়। তারপর আমি বাংলাদেশে গিয়ে ওখানে বিক্রি করে আসবো জাগা জমি। না হলে সবাই দখল করে নেবে জমিটা। সেই ছোট্ট রতন এখন বিডিও। রতন বলল মা আমি এখন অনেক বড় চাকরি পেয়েছি। চলো আমরা এখান থেকে চলে যাই। মা মিনা দেবী বলল না রে এটা আমার শ্বশুরের ভিটে তোর বাবা, এখানে মরেছে আমিও এখানেই মরবো। যাইহোক মিনা দেবী একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে দেখে রতনের সঙ্গে বিয়ে দিল। মেয়েটা খুব ভালো। মিনা দেবী আর রতনের মাসিকে খুব ভালোবাসে। আচ্ছা, এবার বল আমার গল্পটা তোমাদের কেমন লাগলো?


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy